বিশেষ সংবাদদাতা,কলকাতা:মোহনবাগানের আই লিগ জয়ে শুভেচ্ছা জানালেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। কলকাতা, রাজ্যের সীমা ছাড়িয়ে মোহনবাগানের আই লিগ জয়ের আনন্দ ছড়িয়ে পড়েছে গোটা দেশেই। মোহনবাগানের আই লিগ জয়ে খুশি প্রধানমন্ত্রীও। রবিবার টুইট করে মোহনবাগান ক্লাব এবং সমর্থকদের অভিনন্দন জানান তিনি। টুইটারে তিনি লিখেছেন, ‘আই লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য মোহনবাগান ক্লাব, তার কর্তকর্তা এবং সমর্থকদের প্রতি আমার অভিনন্দন রইল। আগামিদিনে মোহনবাগানের আরও সাফল্য কামনা করি। এই মুহূর্তটা সত্যিই আনন্দের। আশা করি, ভবিষ্যতেও ভারতীয় ফুটবলকে আরও সমৃদ্ধ ও গর্বিত করবে মোহনবাগান। তাদের উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি।’ মোহনবাগানকে শুভেচ্ছা জানিয়ে টুইট করেছেন কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রী কিরেন রিজিজু এবং পশ্চিমবাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও।
মোহনবাগানের আই লিগ জয়ে রবিবার সন্ধ্যায় কলকাতার ঐতিহাসিক কার্জন গেট সেজে উঠেছিল সবুজ–মেরুন আলোকমালায়। সারাদিন কর্মকর্তা, খেলোয়াড় এবং সমর্থকদের উপস্থিতিতে জমজমাট ছিল ময়দানে মোহনবাগান তাবু। কিন্তু, করোনা পরিস্থিতিতে দুর্গাপুজো করা ঠিক হবে কিনা, তা নিয়ে যখন আদালতে মামলা চলছে, তখন আই লিগ জয়ের উৎসব পালনের নামে এ কী করল মোহনবাগান? এ কথা ঠিক, অনেকদিন পরে মোহনবাগানের সৌজন্যে বাংলায় আই লিগ এসেছে। করোনার জন্য সেই ট্রফি পেতে দেরি হয়েছে শতবর্ষ প্রাচীন এই ক্লাবের। তাই ভারতীয় ফুটবলের মক্কা কলকাতার রবিবাসরীয় সকাল তেতে ছিল এই উৎসবকে ঘিরে। যার ফল জনপ্লাবন। স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছে, মানুষের আবেগ যে আছড়ে পড়তে পারে, তা অনুমানের বাইরে ছিল না। মোহনবাগান কর্তাদেরও তা অজানা থাকার কথা নয়। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কথা ভেবে সেই উৎসবকে সীমাবদ্ধ রাখার কথা কি ভাবা যেত না? মোহনবাগানের কর্তারা কি সে কথা বুঝতে পারেননি?
এর আগেও মোহনবাগান আই লিগ জিতেছে। এমন নয় যে এবারই প্রথম এই লিগ সবুজ–মেরুনের ঘরে এসেছে! এ কথা সকলেই জানতেন, করোনা সংক্রমণের জন্যই মার্চ মাসে আই লিগ বন্ধ হয়ে যায়। তার মধ্যেই পয়েন্টে সবার উপরে থেকে চ্যাম্পিয়ন হয়ে গিয়েছিল মোহনবাগান। কিন্তু লিগ শেষ না হওয়ার জন্য মোহনবাগানকে এআইএফএফ চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করতে পারছিল না। তাই মোহনবাগানের হাতেও লিগ জয়ের ট্রফি আসেনি। অবশেষে রবিবার কলকাতার হায়াত রিজেন্সি হোটেলে আই লিগ সিইও সুনন্দ ধরের উপস্থিতিতে মোহনবাগানের হাতে ট্রফি তুলে দেওয়া হয়। এদিন ওই অনুষ্ঠানে ছিলেন আইএফএ সচিব জয়দীপ মুখোপাধ্যায় এবং মোহনবাগানের শীর্ষকর্তারাও। তার পরই সেই ট্রফি নিয়ে হাজার হাজার মোহনবাগান সমর্থক মিছিল করে হায়াত থেকে বাইপাস, কাদাপাড়া, উল্টোডাঙা, খান্না হয়ে যান সোজা কলকাতা ময়দানে।
সেই মিছিল দেখে মনেই হয়নি যে, রাজ্যে কোভিড নামে এক ভয়ঙ্কর ভাইরাসের সংক্রমণ রয়েছে। ন্যূনতম স্বাস্থ্য বিধিও মেনে চলার কথা সমর্থকরা যেমন ভাবেননি, তেমনই সেই বিধি মনে চলার ব্যাপারে সমর্থকদের নির্দেশ দেওয়ার ব্যাপারে কোনও মোহনবাগান কর্তাকেও সক্রিয় হতে দেখা যায়নি। এমনকী, রাজ্যের তরফে সেই প্লাবন নিয়ন্ত্রণে কোনও প্রশাসনিক তৎপরতাও কারও চোখে পড়েনি। অনেকেরই আশঙ্কা, মোহনবাগানের লিগ জয়ের উৎসব পালনের চেহারাই যদি এমন হয়, তা হলে আসন্ন দুর্গাপুজোয় বাংলার চেহারা কেমন হবে? সে কথা ভেবে কেউ কেউ আশঙ্কায় অঁাতকে উঠেছেন।
তবে বাংলার কোনও দলের বিজয় উৎসব পালনে এবারই প্রথম এমন উন্মাদনা কলকাতা দেখেনি। এর আগে আশিয়ান কাপ জেতার পর ইস্টবেঙ্গল ক্লাব জাকার্তা থেকে কলকাতায় ফিরলে রীতিমতো জনবিস্ফোরণ ঘটেছিল। মোহনবাগানও এর আগে আই লিগ জিতেছে। সেই উৎসব পালনের ঘটনাও বাংলার ফুটবলপ্রেমী মানুষের হৃদয়ে গেঁথে রয়েছে। কিন্তু এবার তো পরিস্থিতি পুরোপুরি আলাদা। মোহনবাগান কর্তারা কি সে কথা ভুলে গিয়েছিলেন? এই প্রশ্ন উঠেছে রাজ্যের চিকিৎসক এবং এমনকী, ক্রীড়া মহলের তরফেও। যদিও এদিন রাত পর্যন্ত বিষয়টি নিয়ে মোহনবাগানের কোনও কর্তাই কোনও প্রতিক্রিয়া দেননি।